প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ,

0
37

প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ,।

বাংলাদেশ বর্তমান সময়ঃ  রংপুরে শুরু হয়েছে প্রিপেইড মিটার সংযোগ কার্যক্রম, তবে এটি নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংশয় ও অসন্তোষ।

প্রযুক্তিগত সুবিধার কথা শোনা গেলেও, মিটারটির প্রভাব সম্পর্কে গ্রাহকদের কাছে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি (নেসকো) তাদের ইচ্ছেমতো সংযোগ স্থাপন শুরু করেছে, কিন্তু গণশুনানি বা প্রচারের অভাবে গ্রাহকরা এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন। অনেকেই চিন্তা করছেন, মিটারটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সুবিধাগুলি আদৌ কার্যকর হবে কি না। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠনগুলো একে অপসারণের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় রংপুর নগরীর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-৩ এর আওতায় ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিপেইড মিটার সংযোগ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৩০০ গ্রাহকের বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। শুধু বিতরণ-৩ বিভাগের আওতায় ৩২ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। রংপুরের অন্যান্য বিতরণ বিভাগেও সংযোগ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে, কিন্তু এ বিষয়ে গ্রাহকদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) কোনো রকম প্রচারণা কিংবা আলোচনা ছাড়াই এই সংযোগ দিচ্ছে। প্রিপেইড মিটারের প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকলেও গ্রাহকরা এর প্রতি সন্দিহান। অনেকের ধারণা, যদি লোড শেষ হয়ে যায়, তাহলে বিদ্যুৎ চলে যাবে। বিশেষত, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রতিবার টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ চালু রাখা কঠিন হতে পারে। এমন ধরনের অস্পষ্ট তথ্যের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে নানা ভীতি এবং সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে, প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটি, রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি এবং আরও কয়েকটি সংগঠন। তারা অবিলম্বে প্রিপেইড মিটার অপসারণের দাবি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটি রংপুর স্মারকলিপি প্রদান করেছে এবং বৃহস্পতিবার নেসকোর সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এছাড়াও আগামী ২৮ ডিসেম্বর রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি নেসকো বিদ্যুৎ অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে।

বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির রংপুরের নেতা সাংবাদিক কামরুল হাসান টিটু বলেন, ‘প্রিপেইড মিটারে টাকা শেষ হয়ে গেলে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়বে। তাছাড়া প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিয়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড গ্রাহকদের মতামত না নিয়ে কিংবা গণশুনানি না করে একপ্রকার চাপিয়ে দিচ্ছে। যা রংপুরের সর্বস্তরের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা ৪ দফা দাবী উপস্থাপন করে গত ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি। তিনি জানালেন জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গণশুনানি করবেন, তবে দুঃখজনকভাবে তিনি তার আগেই সংযোগ স্থাপন শুরু করে দিয়েছেন। আমরা গ্রাহকরা পুরো বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি।

রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য এডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে গ্রাহকরা কিছুই জানে না। গণশুনানি ও গ্রাহকদের মতামত ছাড়াই এই মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আগামী ২৮ ডিসেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।’

গ্রাহক আলী হায়দার রনি বলেন, ‘কোনরকম প্রচারণা ছাড়াই প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র চলতি বিলের কাগজে লেখা আছে, ‘আপনার মিটারটি কিছুদিনের মধ্যে প্রিপেইড হতে যাচ্ছে’। এছাড়া কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি। এ নিয়ে ভালো-মন্দ কিছুই জানি না। আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। কেমন বিল আসবে, টাকা শেষ হলে বিদ্যুৎ চলে যাবে কিনা, এসব কিছুই জানি না।’

বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩, নেসকো পিএলসি, রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন জানান, ‘গত ২২ ডিসেম্বর বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০০ এর অধিক বাসায় মিটার স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাহকরা এখনো পুরোপুরি মিটার সম্পর্কে জানেন না, এজন্য কিছু নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। তবে মিটার সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে এই সমস্যা হবে না। তাছাড়া মিটার স্থাপনের বিষয়টি সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্ত। দেশের অন্যান্য বিভাগের অনেক জেলায় স্থাপন করা হয়েছে, রংপুর বরং পিছিয়ে আছে।

নেসকো রংপুর সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসনাত জামান বলেন, ‘গণশুনানি অচিরেই করা হবে। তাছাড়া জেলার সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি করপোরেশনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের ভালো দিক রয়েছে, তবে অনেকে হয়তো ভালোভাবে বিষয়টি জানেন না, যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। যখন বিষয়টি পরিস্কার হবে, তখন আর নেতিবাচক আলোচনা থাকবে না। এসময় তিনি সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here