অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে অভিনব প্রতারণা; চাইনিজ নাগরিকসহ তিনজন গ্রেফতার।

0
15

অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে অভিনব প্রতারণা; চাইনিজ নাগরিকসহ তিনজন গ্রেফতার।

মোঃ ইমদাদুল হক মিলনঃ অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাইনিজ নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির উত্তরখান থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চাইনিজ নাগরিক মি. কুকি (৩৫)।

সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ রাতে উত্তরখান ও গুলশান থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করে উত্তরখান থানা পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত নগদ ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, চার হাজার ডলার ও বেশ কিছু অন্যান্য বিদেশী মুদ্রা, চারটি মোবাইল ফোনসেট ও কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা উদ্ধার করা হয়।

উত্তরখান থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা জনৈক নাহিদুল ইসলাম (২৮)কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যার’ এর মাধ্যমে অনলাইনে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেয়। তিনি সরল বিশ্বাসে তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে পলারস্টেপ সফটওয়্যারে অনলাইনে কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতে তারা নাহিদুল ইসলামকে ৮২০ টাকা কমিশন প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে তারা নাহিদুল ইসলাম এর নিকট থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় চার লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা গ্রহণ করে। এরপরও বাদীকে আর কোন কমিশন প্রদান না করে পুনরায় তিন লক্ষ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা চাইলে বাদীর সন্দেহ হয়। তখন বাদী ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন একাউন্টটি উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজ এর নামে। তখন বাদী বিষয়টি উত্তরখান থানায় অবহিত করেন।

ঘটনার সত্যতা যাচাই ও আইনগত সহায়তার জন্য উত্তরখান থানার একটি টিম ২৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ০১.১০ ঘটিকায় আনাস এন্টারপ্রাইজের দোকানের মালিক মোঃ মোর্শেদ আলমকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং পুলিশকে জানায় জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং অবশিষ্ট টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। থানা পুলিশ তখন মোঃ মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নেয় এবং তার নিকট থেকে নয় লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, দুটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দতালিকা মূলে জব্দ করে।

মোর্শেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক ০২:৫০ ঘটিকায় বাবুর্চি বাড়ির গফুর মুন্সী রোডের একটি বাসা থেকে জামালকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। থানা পুলিশ তার হেফাজত থেকে ৪০০০ ডলার ও অন্যান্য বিদেশী মুদ্রা, দুটি মোবাইল ফোন এবং ব্যাংকের চেকবইয়ের কিছু পাতা জব্দ করে।

পরবর্তীতে জামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো: নাসিম এ-গুলশান এর নেতৃত্বে উত্তরখান থানার একটি টিম সোমবার ২৩ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক ০৪:৩০ ঘটিকায় গুলশান থানা পুলিশের সহায়তায় গুলশান-১ এর AWR টাওয়ারের নিচ থকে চাইনিজ নাগরিক মি.কুকিকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে আরো জানা যায়, জনৈক মি.কুকি নামক একজন চাইনিজ নাগরিকের সাথে জামালের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চায়নাতে গিয়ে জামালের পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মি. কুকি জানায় কিছুদিন পরে সে বাংলাদেশে আসবে এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা প্রদান করবে। ১৫-২০ দিন আগে উত্তরা রেস্টুরেন্টে মি. কুকির সাথে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে মি. কুকি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে বলে যে নাম্বারে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে এবং সে কুকির প্রদত্ত নাম্বারে উক্ত টাকা ট্রান্সফার করবে।কুকি জানায় এর বিনিময়ে জামাল কমিশন পাবে। জামাল মি. কুকির প্রস্তাবে রাজী হয়ে মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার মি. কুকিকে প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত মি.কুকি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে নিজে জড়িত থেকে তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে স্বীকার করেছে।

ভিকটিম নাহিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপির উত্তরখান থানায় গ্রেফতারকৃত তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here