মানবপাচারকারী চক্রের ৬ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার।

0
7

মানবপাচারকারী চক্রের ৬ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার।

মোঃ ইমদাদুল হক মিলনঃ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে মানবপাচারকারী চক্রের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মামুন (৩৫),  ফয়সাল (৩০) বৃষ্টি (২২),  দিলারা বেগম (৫০), মোঃ সোহাগ হোসেন (৩৪) ও  মোঃ রিপন ওরফে আপন (৩২)।

কামরাঙ্গীরচর থানা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম বেবি আক্তার (২৬) তার স্বামী রবিউল কাজীর সাথে প্রায় একবছর ধরে কামরাঙ্গীরচর এলাকার ঝাউচরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্বামী রবিউল পেশায় একজন জুতার কারিগর। পাশাপাশি বসবাসের সুবাধে বেবি আক্তারের সাথে পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত সোহাগের পরিচয় হয়। সোহাগের মাধ্যমে বেবির পরিচয় হয় বিভিন্ন ইভেন্ট প্রোগ্রাম এ ড্যান্সার হিসেবে কাজ করা দম্পতি মামুন ও বৃষ্টির সাথে এবং পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে পরিচয় হয় আরেক ড্যান্সার আপনের সাথে। কাজ করার সুবিধার্থে এরা সবাই পাশাপাশি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতো।

ভিকটিম বেবি আক্তার টিকটকে ভিডিও বানাতো এবং নিজেই উপার্জন করার জন্য কাজ খুঁজতো।মামুনের স্ত্রী বৃষ্টি ও তার শাশুড়ি দিলারা বেগম প্রায় সময়ই ভিকটিম বেবি আক্তারকে বিদেশে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রলোভিত করতো।তারা বেবি আক্তারকে ভারতের মুম্বাইতে পার্লারে কাজের জন্য প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা বলে প্রলোভিত করে এবং তার স্বামীর অগোচরে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়। সরল বিশ্বাসে বেবি আক্তার তাদের কথা মতো কাউকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এ কাজে তাকে সহায়তা করে মামুন, তার স্ত্রী বৃষ্টি, শাশুড়ি দিলারা বেগম এবং পাশের ভাড়াটিয়া সোহাগ ও আপন। মামুন মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতা ফয়সালের যোগসাজশে বেবি আক্তারকে ভারতে পাচারের জন্য গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৪  সকাল আনুমানিক সাড়ে সাত ঘটিকায় শ্যামলী কাউন্টার হতে এসপি গোল্ডেন পরিবহনে করে সাতক্ষীরা পাঠায়। বেবি আক্তার বিকাল আনুমানিক পাঁচ ঘটিকার দিকে সাতক্ষীরায় পৌঁছালে পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে নিয়ে যায়। এরপর ওইদিন রাত আনুমানিক দশটা থেকে বারো ঘটিকার মধ্যে বেবি আক্তারকে নৌকা যোগে ইন্ডিয়ায় পাচার করে দেয় চক্রটি। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থানা পুলিশ বেবি আক্তারসহ কয়েকজনকে মুম্বাই যাওয়ার সময় আটক করে এবং হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বেবি আক্তার তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং তার ভারতে পাচার হওয়ার বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪  ভিকটিমের বোন চম্পা বেগম বাদি হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় মানব পাচার (প্রতিরোধ ও দমন) আইনে একটি মামলা রুজু করেন।

থানা সূত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মামুনের শ্বাশুরি দিলারা বেগম, সোহাগ ও আপনকে; কেরানীগঞ্জ থেকে মানবপাচারের মূলহোতা ফয়সালকে এবং চাঁদপুর থেকে মামুন ও তার স্ত্রী বৃষ্টিকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সমন্ধে জানা যায়, মামুন এর আগেও কবিতা নামের একটি মেয়েকে পাচার করার কথা স্বীকার করেছে।মামুনের সাথে চিহ্নিত মানবপাচারকারী ফয়সালের (যার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে) পূর্ব থেকেই পরিচয় ছিলো। ফয়সালের আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে যোগসাজশ রয়েছে। মামুন এই চক্রের সাথে মিলিত হয়ে তার স্ত্রী বৃষ্টি, শাশুড়ি দিলারা বেগম এবং পাশের ভাড়াটিয়া সোহাগ ও আপন এর সহায়তায় মানবপাচারের সাথে জড়িত ছিল। সে প্রতি মেয়েকে পাচার করার জন্য ২০ হাজার টাকা করে পেতো।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও মানব পাচারের সাথে জড়িত চক্রের অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here