গহীন সুন্দরবনে পর্যটন জাহাজ থেকে অসুস্থ শিশুকে উদ্ধার করলো কোস্টগার্ড ।
মোংলা প্রতিনিধিঃ ৫০ জনের একটি পর্যটক দল এমভি উৎসব নামের একটি জাহাজে করে সুন্দরবন উদ্দেশ্যে কটকা ভ্রমণে যায়। ৭ই নভেম্বর ( ২০২৪) রাত ১১ টা ১০ মিনিটের সময় সুন্দরবন এর সংরক্ষিত অঞ্চল কটকায় পৌঁছাতেই ছয় মাস বয়সী একজন যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয় ।
কটকা থেকে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার, যা প্রায় ৯ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত। তাছাড়া পর্যটন জাহাজ চলাচলের গতি সীমিত। কাছাকাছি দূরত্বে কোনো জনবসতির চিহ্ন না থাকা এবং জাহাজের মধ্যে কোনো ডাক্তার না থাকায় শিশুটি চিকিৎসার অভাবে আরো অসুস্থ হতে থাকে । এখান থেকে টেলিযোগাযোগের জন্য একমাত্র অবলম্বন হলো টেলিটকের একটি মাত্র ফোন।
ওই সময়ে জাহাজে সামরিক বাহিনীর একজন অবঃপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন । তিনি বিষয়টি অবলোকন করেন এবং সাথে সাথে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরকে অবহিত করেন। পরে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তর এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনকে নির্দেশনা প্রদান করেন ।
বিষয়টি জানা মাত্রই কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সার্জন লে. মোহাম্মদ রায়হানুল জান্নাহ’র নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিক্যাল টিম জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সহ হাই স্পীড বোট যোগে কটকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
রাত্রিকালীন অবস্থায় প্রচন্ড কুয়াশা থাকা সত্বেও ওই উদ্ধারকারী দলটি ৮৬ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের দূর্গমতম স্থানে খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যটক জাহাজ এম ভি উৎসব এর নিকট পৌঁছায়। পরবর্তীতে সার্জন লে. মোহাম্মদ রায়হানুল জান্নাহ, এএমসি টুরিস্ট জাহাজটিতে থাকা অসুস্থ শিশুটিকে জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিক্যাল ইভ্যাকুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং বোট যোগে দ্রুততার সাথে মোংলা বেইস এ স্থানান্তর করেন । এ সময়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রেরণ করে শিশুটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেন । ফলে ওই ভ্রমণকারী জাহাজে অবস্থানরত পর্যটক এবং জাহাজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য ট্যুরিস্ট সিজনে সাধারনত এধরনের জাহাজগুলি সমুদ্রের কাছাকাছি সুন্দরবনের গহীন এলাকায় গমন করে থাকে। সুন্দরবনের গহীনে ওই সমস্ত এলাকাসমূহে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়া অত্যন্ত দুরুহ বিষয়। একারণে ট্যুরিস্ট জাহাজগুলি ভ্রমণের পূর্বে একজন চিকিৎসক/প্যারামেডিকসহ যাত্রা করলে এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড উপকূল অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি মানবতার সেবায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ঘটনাটি তারই অন্যতম উদাহরণ। জনগণের সেবায় কোস্ট গার্ড সর্বদা নিয়োজিত ছিল এবং ভবিষ্যতেও এই মানুষের সেবায় এই ধরনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান, কোস্টগার্ড কর্মকর্তা সার্জন লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ রায়হানুল জান্নাহ ।